গর্ভাবস্থায় ওজন ও পুষ্টি
গর্ভাবস্থায় কতটুকু ওজন বাড়া স্বাভাবিক?
এই সময়ে একজন মায়ের সাধারণত ১০-১২ কেজি পর্যন্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। তবে এটা গর্ভের আগের ওজনের ওপর নির্ভর করে। যাদের ইগও ১৯-এর কম সেসব মায়েরা ১৭ কেজি পর্যন্ত বাড়াতে পারেন তবে ইগও ২৫-এর বেশি হলে ৭ কেজি পর্যন্ত ওজন বাড়লেই যথেষ্ট। এর মধ্যে প্রথম তিন মাস ১ থেকে ২ কেজি এবং মাঝের ও শেষ তিন মাস ৫ কেজি করে ওজন বাড়তে পারে।
কোন খাবার কিভাবে পুষ্টি দিতে পারে?
আমাদের দেশে গর্ভবতী মাদের পুষ্টিহীনতার একটি প্রধান কারণ কুসংস্কার এবং অসচেতনতা। অনেকের ধারণা গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ভিটামিন ও পুষ্টিকর খাবার খেলে গর্ভের শিশু বড় হয়ে যাবে এবং সিজারের সম্ভাবনা বাড়ে। কিন্তু এ সময় মা ও বাচ্চার পুষ্টির জন্য অন্য সময়ের চেয়ে অধিক খাবারের দরকার হয়। মায়ের জন্য অতিরিক্ত যে পুষ্টিমান দরকার তা হলো-
ক্যালরি-৩০০ ক্যালোরি, প্রোটিন-৬০ মি.গ্রাম, ক্যালসিয়াম-১২০০ মি.গ্রাম, আয়রন-৩০ মি.গ্রাম।
বিভিন্ন রকম খাবার থেকে আমরা খাবারের উপাদানগুলো পেয়ে থাকি। খাবার নির্বাচনের সময় তাই সতর্ক থাকতে হবে যাতে সব রকম উপাদানই প্রয়োজনীয় মাত্রায় থাকে। দিনে ৮ থেকে ১০ গøাস পানি এবং আঁশ জাতীয় খাবার যেমন- লাল আটার রুটি, শাকসবজি, কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে সাহায্য করে। শক্তি প্রদানকারী খাবারগুলোর মধ্যে আছে আটা, গম, পাস্তা, নুডুলস, ওটস, আলু ইত্যাদি। ফলমূল ও শাকসবজি থেকে আমরা পাই বিভিন্ন রকম ভিটামিন ও এন্টি অক্সিডেন্ট। প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উপাদানগুলো হলো- মাছ, মাংস, ডিম, বাদাম, শিম, সয়া প্রডাক্ট। প্রতিদিন এক গøাস দুধ আমাদের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে পারে। এ ছাড়া ক্যালসিয়ামের অন্য সোর্সগুলো হচ্ছে চিজ, দই, ব্রকলি, এলমন্ড, আইসক্রিম ইত্যাদি। আয়রন জাতীয় খাবারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সবুজ শাক, লাল মাংস, বাদাম, কচু জাতীয় সবজি। প্রতিদিনের খাবারের অর্ধেকটা জুড়ে থাকা উচিত ফলমূল ও শাকসবজি এবং ফ্যাটের পরিমাণ সব খাদ্যের ৩০ ভাগ বা এর কম হতে হবে।
কোন খাবার পরিত্যাগ করা উচিত?
এ সময় আনপাস্তুরাইজ দুধ, আধা সিদ্ধ মাংস, অপরিষ্কার শাক-সবজি থেকে কিছু ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে, যা গর্ভপাতের জন্য দায়ী। এ ছাড়া এলকোহল, অতিরিক্ত চা-কফি, কোল্ড ড্রিংক পরিহার করা উচিত। গর্ভাবস্থায় কিছু মায়েরা অখাদ্য, যেমন বরফ, মাটি, বালি, ছাই এসব খেয়ে থাকে। এই প্রবণতাকে পিকা বলে। এই প্রবণতা মা ও বাচ্চার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
গর্ভবতী নারী : কিছু ভুল ধারণা ও করণীয়
গর্ভধারণ যে কোনো নারীর জীবনে পরম আকাক্সিক্ষত মুহূর্ত। গর্ভধারণের পর প্রথম যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে পারে তা হচ্ছে গর্ভপাত। এ জন্য পরিবারের সদস্যরা অনেক সময় বিভিন্ন কুসংস্কারকে দায়ী করেন। যেমন- সন্ধ্যার পর বাইরে বের হওয়া, স্বামী-স্ত্রীর সহবাস, সামান্য আঘাত পাওয়া ইত্যাদি। সাধারণভাবে এগুলো গর্ভপাতের জন্য দায়ী না। প্রতি ১০০ জন গর্ভবতী নারীর মধ্যে ১৫ জনের ক্ষেত্রে প্রথমবার গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে। অনেক সময় ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে এর কারণ নির্ণয় করা যায়।
ভিটামিন ওষুধ খেতে আনেকে অনীহা প্রকাশ করে। তাদের ধারণা এতে বাচ্চা বড় হয়ে যায় এবং সিজারের সম্ভাবনা বাড়ে। এটি একটি ভুল ধারণা। ভিটামিন মায়ের শরীরের রক্ত শূন্যতা দূর করে এবং হাড় ক্ষয়ের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
অনেক মায়েরা এ সময় শারীরিক পরিশ্রম ও সহবাস করা থেকে বিরত থাকেন এবং এটা গর্ভের বাচ্চার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন। কিন্তু কিছু কিছু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা (যেমন- প্লাসেন্টা প্রিভিয়া, রিপিটেড আবরসন, ওটএজ) ছাড়া মায়েরা স্বাভাবিক সব কাজই চালিয়ে যেতে পারেন। এই অবস্থায় একজন মা প্রতিদিন ৩০ মিনিট যে কোনো মধ্যমানের ব্যায়াম (যেমন- হাঁটা, সাঁতার কাটা) করতে পারেন সপ্তাহে ৩ থেকে ৭ দিন। এতে করে অতিরিক্ত ওজন হওয়া, ডায়াবেটিস এবং প্রেসারের ঝুঁকি আনেক কমে যায়।
পেঁপে ও আনারস পেটের জন্য উপকারী ফল এবং পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যায়। তবে যাদের গর্ভপাতের হিস্ট্রি আছে তাদের প্রথম তিন মাস অতিরিক্ত কাচা পেঁপে ও আনারস খাওয়া উচিত নয়। কারণ কিছু ক্ষেত্রে এগুলো জরায়ুর সংকোচন ঘটিয়ে গর্ভপাত করতে পারে। এই সময় আধা সিদ্ধ মাংস, আনপাস্তুরাইজড মিল্ক, হটডগ খেলেও লিস্টেরিয়া নামক জীবাণুর সংক্রমণ থেকে গর্ভপাত হতে পারে। বাড়ির পোষা বিড়াল থেকেও এই জীবাণু আসতে পারে। যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তাদের অতিরিক্ত চা, কফি বাদ দিতে হবে এবং প্রিএক্লাপ্সিয়া বা প্রেসারের সমস্যা থাকলে খাবারে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া উচিত হবে না।
সবশেষে মনে রাখা উচিত, গর্ভবতী মাকে সব সময় হাসিখুশি ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে। কারণ গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক অবস্থা পরবর্তীকালে শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলে, যা গবেষণায় প্রমাণিত।
হ ডা. নুসরাত জাহান
গর্ভাবস্থায় কতটুকু ওজন বাড়া স্বাভাবিক?
এই সময়ে একজন মায়ের সাধারণত ১০-১২ কেজি পর্যন্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। তবে এটা গর্ভের আগের ওজনের ওপর নির্ভর করে। যাদের ইগও ১৯-এর কম সেসব মায়েরা ১৭ কেজি পর্যন্ত বাড়াতে পারেন তবে ইগও ২৫-এর বেশি হলে ৭ কেজি পর্যন্ত ওজন বাড়লেই যথেষ্ট। এর মধ্যে প্রথম তিন মাস ১ থেকে ২ কেজি এবং মাঝের ও শেষ তিন মাস ৫ কেজি করে ওজন বাড়তে পারে।
কোন খাবার কিভাবে পুষ্টি দিতে পারে?
আমাদের দেশে গর্ভবতী মাদের পুষ্টিহীনতার একটি প্রধান কারণ কুসংস্কার এবং অসচেতনতা। অনেকের ধারণা গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ভিটামিন ও পুষ্টিকর খাবার খেলে গর্ভের শিশু বড় হয়ে যাবে এবং সিজারের সম্ভাবনা বাড়ে। কিন্তু এ সময় মা ও বাচ্চার পুষ্টির জন্য অন্য সময়ের চেয়ে অধিক খাবারের দরকার হয়। মায়ের জন্য অতিরিক্ত যে পুষ্টিমান দরকার তা হলো-
ক্যালরি-৩০০ ক্যালোরি, প্রোটিন-৬০ মি.গ্রাম, ক্যালসিয়াম-১২০০ মি.গ্রাম, আয়রন-৩০ মি.গ্রাম।
বিভিন্ন রকম খাবার থেকে আমরা খাবারের উপাদানগুলো পেয়ে থাকি। খাবার নির্বাচনের সময় তাই সতর্ক থাকতে হবে যাতে সব রকম উপাদানই প্রয়োজনীয় মাত্রায় থাকে। দিনে ৮ থেকে ১০ গøাস পানি এবং আঁশ জাতীয় খাবার যেমন- লাল আটার রুটি, শাকসবজি, কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে সাহায্য করে। শক্তি প্রদানকারী খাবারগুলোর মধ্যে আছে আটা, গম, পাস্তা, নুডুলস, ওটস, আলু ইত্যাদি। ফলমূল ও শাকসবজি থেকে আমরা পাই বিভিন্ন রকম ভিটামিন ও এন্টি অক্সিডেন্ট। প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উপাদানগুলো হলো- মাছ, মাংস, ডিম, বাদাম, শিম, সয়া প্রডাক্ট। প্রতিদিন এক গøাস দুধ আমাদের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে পারে। এ ছাড়া ক্যালসিয়ামের অন্য সোর্সগুলো হচ্ছে চিজ, দই, ব্রকলি, এলমন্ড, আইসক্রিম ইত্যাদি। আয়রন জাতীয় খাবারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সবুজ শাক, লাল মাংস, বাদাম, কচু জাতীয় সবজি। প্রতিদিনের খাবারের অর্ধেকটা জুড়ে থাকা উচিত ফলমূল ও শাকসবজি এবং ফ্যাটের পরিমাণ সব খাদ্যের ৩০ ভাগ বা এর কম হতে হবে।
কোন খাবার পরিত্যাগ করা উচিত?
এ সময় আনপাস্তুরাইজ দুধ, আধা সিদ্ধ মাংস, অপরিষ্কার শাক-সবজি থেকে কিছু ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে, যা গর্ভপাতের জন্য দায়ী। এ ছাড়া এলকোহল, অতিরিক্ত চা-কফি, কোল্ড ড্রিংক পরিহার করা উচিত। গর্ভাবস্থায় কিছু মায়েরা অখাদ্য, যেমন বরফ, মাটি, বালি, ছাই এসব খেয়ে থাকে। এই প্রবণতাকে পিকা বলে। এই প্রবণতা মা ও বাচ্চার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
গর্ভবতী নারী : কিছু ভুল ধারণা ও করণীয়
গর্ভধারণ যে কোনো নারীর জীবনে পরম আকাক্সিক্ষত মুহূর্ত। গর্ভধারণের পর প্রথম যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে পারে তা হচ্ছে গর্ভপাত। এ জন্য পরিবারের সদস্যরা অনেক সময় বিভিন্ন কুসংস্কারকে দায়ী করেন। যেমন- সন্ধ্যার পর বাইরে বের হওয়া, স্বামী-স্ত্রীর সহবাস, সামান্য আঘাত পাওয়া ইত্যাদি। সাধারণভাবে এগুলো গর্ভপাতের জন্য দায়ী না। প্রতি ১০০ জন গর্ভবতী নারীর মধ্যে ১৫ জনের ক্ষেত্রে প্রথমবার গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে। অনেক সময় ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে এর কারণ নির্ণয় করা যায়।
ভিটামিন ওষুধ খেতে আনেকে অনীহা প্রকাশ করে। তাদের ধারণা এতে বাচ্চা বড় হয়ে যায় এবং সিজারের সম্ভাবনা বাড়ে। এটি একটি ভুল ধারণা। ভিটামিন মায়ের শরীরের রক্ত শূন্যতা দূর করে এবং হাড় ক্ষয়ের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
অনেক মায়েরা এ সময় শারীরিক পরিশ্রম ও সহবাস করা থেকে বিরত থাকেন এবং এটা গর্ভের বাচ্চার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন। কিন্তু কিছু কিছু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা (যেমন- প্লাসেন্টা প্রিভিয়া, রিপিটেড আবরসন, ওটএজ) ছাড়া মায়েরা স্বাভাবিক সব কাজই চালিয়ে যেতে পারেন। এই অবস্থায় একজন মা প্রতিদিন ৩০ মিনিট যে কোনো মধ্যমানের ব্যায়াম (যেমন- হাঁটা, সাঁতার কাটা) করতে পারেন সপ্তাহে ৩ থেকে ৭ দিন। এতে করে অতিরিক্ত ওজন হওয়া, ডায়াবেটিস এবং প্রেসারের ঝুঁকি আনেক কমে যায়।
পেঁপে ও আনারস পেটের জন্য উপকারী ফল এবং পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যায়। তবে যাদের গর্ভপাতের হিস্ট্রি আছে তাদের প্রথম তিন মাস অতিরিক্ত কাচা পেঁপে ও আনারস খাওয়া উচিত নয়। কারণ কিছু ক্ষেত্রে এগুলো জরায়ুর সংকোচন ঘটিয়ে গর্ভপাত করতে পারে। এই সময় আধা সিদ্ধ মাংস, আনপাস্তুরাইজড মিল্ক, হটডগ খেলেও লিস্টেরিয়া নামক জীবাণুর সংক্রমণ থেকে গর্ভপাত হতে পারে। বাড়ির পোষা বিড়াল থেকেও এই জীবাণু আসতে পারে। যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তাদের অতিরিক্ত চা, কফি বাদ দিতে হবে এবং প্রিএক্লাপ্সিয়া বা প্রেসারের সমস্যা থাকলে খাবারে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া উচিত হবে না।
সবশেষে মনে রাখা উচিত, গর্ভবতী মাকে সব সময় হাসিখুশি ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে। কারণ গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক অবস্থা পরবর্তীকালে শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলে, যা গবেষণায় প্রমাণিত।
হ ডা. নুসরাত জাহান
গর্ভাবস্থায় ওজন ও পুষ্টি
গর্ভাবস্থায় কতটুকু ওজন বাড়া স্বাভাবিক?
এই সময়ে একজন মায়ের সাধারণত ১০-১২ কেজি পর্যন্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। তবে এটা গর্ভের আগের ওজনের ওপর নির্ভর করে। যাদের ইগও ১৯-এর কম সেসব মায়েরা ১৭ কেজি পর্যন্ত বাড়াতে পারেন তবে ইগও ২৫-এর বেশি হলে ৭ কেজি পর্যন্ত ওজন বাড়লেই যথেষ্ট। এর মধ্যে প্রথম তিন মাস ১ থেকে ২ কেজি এবং মাঝের ও শেষ তিন মাস ৫ কেজি করে ওজন বাড়তে পারে।
কোন খাবার কিভাবে পুষ্টি দিতে পারে?
আমাদের দেশে গর্ভবতী মাদের পুষ্টিহীনতার একটি প্রধান কারণ কুসংস্কার এবং অসচেতনতা। অনেকের ধারণা গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ভিটামিন ও পুষ্টিকর খাবার খেলে গর্ভের শিশু বড় হয়ে যাবে এবং সিজারের সম্ভাবনা বাড়ে। কিন্তু এ সময় মা ও বাচ্চার পুষ্টির জন্য অন্য সময়ের চেয়ে অধিক খাবারের দরকার হয়। মায়ের জন্য অতিরিক্ত যে পুষ্টিমান দরকার তা হলো-
ক্যালরি-৩০০ ক্যালোরি, প্রোটিন-৬০ মি.গ্রাম, ক্যালসিয়াম-১২০০ মি.গ্রাম, আয়রন-৩০ মি.গ্রাম।
বিভিন্ন রকম খাবার থেকে আমরা খাবারের উপাদানগুলো পেয়ে থাকি। খাবার নির্বাচনের সময় তাই সতর্ক থাকতে হবে যাতে সব রকম উপাদানই প্রয়োজনীয় মাত্রায় থাকে। দিনে ৮ থেকে ১০ গøাস পানি এবং আঁশ জাতীয় খাবার যেমন- লাল আটার রুটি, শাকসবজি, কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে সাহায্য করে। শক্তি প্রদানকারী খাবারগুলোর মধ্যে আছে আটা, গম, পাস্তা, নুডুলস, ওটস, আলু ইত্যাদি। ফলমূল ও শাকসবজি থেকে আমরা পাই বিভিন্ন রকম ভিটামিন ও এন্টি অক্সিডেন্ট। প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উপাদানগুলো হলো- মাছ, মাংস, ডিম, বাদাম, শিম, সয়া প্রডাক্ট। প্রতিদিন এক গøাস দুধ আমাদের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে পারে। এ ছাড়া ক্যালসিয়ামের অন্য সোর্সগুলো হচ্ছে চিজ, দই, ব্রকলি, এলমন্ড, আইসক্রিম ইত্যাদি। আয়রন জাতীয় খাবারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সবুজ শাক, লাল মাংস, বাদাম, কচু জাতীয় সবজি। প্রতিদিনের খাবারের অর্ধেকটা জুড়ে থাকা উচিত ফলমূল ও শাকসবজি এবং ফ্যাটের পরিমাণ সব খাদ্যের ৩০ ভাগ বা এর কম হতে হবে।
কোন খাবার পরিত্যাগ করা উচিত?
এ সময় আনপাস্তুরাইজ দুধ, আধা সিদ্ধ মাংস, অপরিষ্কার শাক-সবজি থেকে কিছু ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে, যা গর্ভপাতের জন্য দায়ী। এ ছাড়া এলকোহল, অতিরিক্ত চা-কফি, কোল্ড ড্রিংক পরিহার করা উচিত। গর্ভাবস্থায় কিছু মায়েরা অখাদ্য, যেমন বরফ, মাটি, বালি, ছাই এসব খেয়ে থাকে। এই প্রবণতাকে পিকা বলে। এই প্রবণতা মা ও বাচ্চার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
গর্ভবতী নারী : কিছু ভুল ধারণা ও করণীয়
গর্ভধারণ যে কোনো নারীর জীবনে পরম আকাক্সিক্ষত মুহূর্ত। গর্ভধারণের পর প্রথম যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে পারে তা হচ্ছে গর্ভপাত। এ জন্য পরিবারের সদস্যরা অনেক সময় বিভিন্ন কুসংস্কারকে দায়ী করেন। যেমন- সন্ধ্যার পর বাইরে বের হওয়া, স্বামী-স্ত্রীর সহবাস, সামান্য আঘাত পাওয়া ইত্যাদি। সাধারণভাবে এগুলো গর্ভপাতের জন্য দায়ী না। প্রতি ১০০ জন গর্ভবতী নারীর মধ্যে ১৫ জনের ক্ষেত্রে প্রথমবার গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে। অনেক সময় ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে এর কারণ নির্ণয় করা যায়।
ভিটামিন ওষুধ খেতে আনেকে অনীহা প্রকাশ করে। তাদের ধারণা এতে বাচ্চা বড় হয়ে যায় এবং সিজারের সম্ভাবনা বাড়ে। এটি একটি ভুল ধারণা। ভিটামিন মায়ের শরীরের রক্ত শূন্যতা দূর করে এবং হাড় ক্ষয়ের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
অনেক মায়েরা এ সময় শারীরিক পরিশ্রম ও সহবাস করা থেকে বিরত থাকেন এবং এটা গর্ভের বাচ্চার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন। কিন্তু কিছু কিছু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা (যেমন- প্লাসেন্টা প্রিভিয়া, রিপিটেড আবরসন, ওটএজ) ছাড়া মায়েরা স্বাভাবিক সব কাজই চালিয়ে যেতে পারেন। এই অবস্থায় একজন মা প্রতিদিন ৩০ মিনিট যে কোনো মধ্যমানের ব্যায়াম (যেমন- হাঁটা, সাঁতার কাটা) করতে পারেন সপ্তাহে ৩ থেকে ৭ দিন। এতে করে অতিরিক্ত ওজন হওয়া, ডায়াবেটিস এবং প্রেসারের ঝুঁকি আনেক কমে যায়।
পেঁপে ও আনারস পেটের জন্য উপকারী ফল এবং পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যায়। তবে যাদের গর্ভপাতের হিস্ট্রি আছে তাদের প্রথম তিন মাস অতিরিক্ত কাচা পেঁপে ও আনারস খাওয়া উচিত নয়। কারণ কিছু ক্ষেত্রে এগুলো জরায়ুর সংকোচন ঘটিয়ে গর্ভপাত করতে পারে। এই সময় আধা সিদ্ধ মাংস, আনপাস্তুরাইজড মিল্ক, হটডগ খেলেও লিস্টেরিয়া নামক জীবাণুর সংক্রমণ থেকে গর্ভপাত হতে পারে। বাড়ির পোষা বিড়াল থেকেও এই জীবাণু আসতে পারে। যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তাদের অতিরিক্ত চা, কফি বাদ দিতে হবে এবং প্রিএক্লাপ্সিয়া বা প্রেসারের সমস্যা থাকলে খাবারে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া উচিত হবে না।
সবশেষে মনে রাখা উচিত, গর্ভবতী মাকে সব সময় হাসিখুশি ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে। কারণ গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক অবস্থা পরবর্তীকালে শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলে, যা গবেষণায় প্রমাণিত।
হ ডা. নুসরাত জাহান
গর্ভাবস্থায় কতটুকু ওজন বাড়া স্বাভাবিক?
এই সময়ে একজন মায়ের সাধারণত ১০-১২ কেজি পর্যন্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। তবে এটা গর্ভের আগের ওজনের ওপর নির্ভর করে। যাদের ইগও ১৯-এর কম সেসব মায়েরা ১৭ কেজি পর্যন্ত বাড়াতে পারেন তবে ইগও ২৫-এর বেশি হলে ৭ কেজি পর্যন্ত ওজন বাড়লেই যথেষ্ট। এর মধ্যে প্রথম তিন মাস ১ থেকে ২ কেজি এবং মাঝের ও শেষ তিন মাস ৫ কেজি করে ওজন বাড়তে পারে।
কোন খাবার কিভাবে পুষ্টি দিতে পারে?
আমাদের দেশে গর্ভবতী মাদের পুষ্টিহীনতার একটি প্রধান কারণ কুসংস্কার এবং অসচেতনতা। অনেকের ধারণা গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ভিটামিন ও পুষ্টিকর খাবার খেলে গর্ভের শিশু বড় হয়ে যাবে এবং সিজারের সম্ভাবনা বাড়ে। কিন্তু এ সময় মা ও বাচ্চার পুষ্টির জন্য অন্য সময়ের চেয়ে অধিক খাবারের দরকার হয়। মায়ের জন্য অতিরিক্ত যে পুষ্টিমান দরকার তা হলো-
ক্যালরি-৩০০ ক্যালোরি, প্রোটিন-৬০ মি.গ্রাম, ক্যালসিয়াম-১২০০ মি.গ্রাম, আয়রন-৩০ মি.গ্রাম।
বিভিন্ন রকম খাবার থেকে আমরা খাবারের উপাদানগুলো পেয়ে থাকি। খাবার নির্বাচনের সময় তাই সতর্ক থাকতে হবে যাতে সব রকম উপাদানই প্রয়োজনীয় মাত্রায় থাকে। দিনে ৮ থেকে ১০ গøাস পানি এবং আঁশ জাতীয় খাবার যেমন- লাল আটার রুটি, শাকসবজি, কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে সাহায্য করে। শক্তি প্রদানকারী খাবারগুলোর মধ্যে আছে আটা, গম, পাস্তা, নুডুলস, ওটস, আলু ইত্যাদি। ফলমূল ও শাকসবজি থেকে আমরা পাই বিভিন্ন রকম ভিটামিন ও এন্টি অক্সিডেন্ট। প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উপাদানগুলো হলো- মাছ, মাংস, ডিম, বাদাম, শিম, সয়া প্রডাক্ট। প্রতিদিন এক গøাস দুধ আমাদের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে পারে। এ ছাড়া ক্যালসিয়ামের অন্য সোর্সগুলো হচ্ছে চিজ, দই, ব্রকলি, এলমন্ড, আইসক্রিম ইত্যাদি। আয়রন জাতীয় খাবারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সবুজ শাক, লাল মাংস, বাদাম, কচু জাতীয় সবজি। প্রতিদিনের খাবারের অর্ধেকটা জুড়ে থাকা উচিত ফলমূল ও শাকসবজি এবং ফ্যাটের পরিমাণ সব খাদ্যের ৩০ ভাগ বা এর কম হতে হবে।
কোন খাবার পরিত্যাগ করা উচিত?
এ সময় আনপাস্তুরাইজ দুধ, আধা সিদ্ধ মাংস, অপরিষ্কার শাক-সবজি থেকে কিছু ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে, যা গর্ভপাতের জন্য দায়ী। এ ছাড়া এলকোহল, অতিরিক্ত চা-কফি, কোল্ড ড্রিংক পরিহার করা উচিত। গর্ভাবস্থায় কিছু মায়েরা অখাদ্য, যেমন বরফ, মাটি, বালি, ছাই এসব খেয়ে থাকে। এই প্রবণতাকে পিকা বলে। এই প্রবণতা মা ও বাচ্চার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
গর্ভবতী নারী : কিছু ভুল ধারণা ও করণীয়
গর্ভধারণ যে কোনো নারীর জীবনে পরম আকাক্সিক্ষত মুহূর্ত। গর্ভধারণের পর প্রথম যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে পারে তা হচ্ছে গর্ভপাত। এ জন্য পরিবারের সদস্যরা অনেক সময় বিভিন্ন কুসংস্কারকে দায়ী করেন। যেমন- সন্ধ্যার পর বাইরে বের হওয়া, স্বামী-স্ত্রীর সহবাস, সামান্য আঘাত পাওয়া ইত্যাদি। সাধারণভাবে এগুলো গর্ভপাতের জন্য দায়ী না। প্রতি ১০০ জন গর্ভবতী নারীর মধ্যে ১৫ জনের ক্ষেত্রে প্রথমবার গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে। অনেক সময় ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে এর কারণ নির্ণয় করা যায়।
ভিটামিন ওষুধ খেতে আনেকে অনীহা প্রকাশ করে। তাদের ধারণা এতে বাচ্চা বড় হয়ে যায় এবং সিজারের সম্ভাবনা বাড়ে। এটি একটি ভুল ধারণা। ভিটামিন মায়ের শরীরের রক্ত শূন্যতা দূর করে এবং হাড় ক্ষয়ের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
অনেক মায়েরা এ সময় শারীরিক পরিশ্রম ও সহবাস করা থেকে বিরত থাকেন এবং এটা গর্ভের বাচ্চার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন। কিন্তু কিছু কিছু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা (যেমন- প্লাসেন্টা প্রিভিয়া, রিপিটেড আবরসন, ওটএজ) ছাড়া মায়েরা স্বাভাবিক সব কাজই চালিয়ে যেতে পারেন। এই অবস্থায় একজন মা প্রতিদিন ৩০ মিনিট যে কোনো মধ্যমানের ব্যায়াম (যেমন- হাঁটা, সাঁতার কাটা) করতে পারেন সপ্তাহে ৩ থেকে ৭ দিন। এতে করে অতিরিক্ত ওজন হওয়া, ডায়াবেটিস এবং প্রেসারের ঝুঁকি আনেক কমে যায়।
পেঁপে ও আনারস পেটের জন্য উপকারী ফল এবং পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যায়। তবে যাদের গর্ভপাতের হিস্ট্রি আছে তাদের প্রথম তিন মাস অতিরিক্ত কাচা পেঁপে ও আনারস খাওয়া উচিত নয়। কারণ কিছু ক্ষেত্রে এগুলো জরায়ুর সংকোচন ঘটিয়ে গর্ভপাত করতে পারে। এই সময় আধা সিদ্ধ মাংস, আনপাস্তুরাইজড মিল্ক, হটডগ খেলেও লিস্টেরিয়া নামক জীবাণুর সংক্রমণ থেকে গর্ভপাত হতে পারে। বাড়ির পোষা বিড়াল থেকেও এই জীবাণু আসতে পারে। যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তাদের অতিরিক্ত চা, কফি বাদ দিতে হবে এবং প্রিএক্লাপ্সিয়া বা প্রেসারের সমস্যা থাকলে খাবারে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া উচিত হবে না।
সবশেষে মনে রাখা উচিত, গর্ভবতী মাকে সব সময় হাসিখুশি ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে। কারণ গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক অবস্থা পরবর্তীকালে শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলে, যা গবেষণায় প্রমাণিত।
হ ডা. নুসরাত জাহান
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন